বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৬

পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩

পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩
( ২০১৩ সনের ৪৯ নং আইন )
 [২৭ অক্টোবর, ২০১৩ ]
   
     
সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রনীত আইন
 
যেহেতু সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইলঃ—
  
 
সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন 
১। (১) এই আইন পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ নামে অভিহিত হইবে।

(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
  
  
 
সংজ্ঞা 
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকিলে, এই আইনে—

(ক) “পিতা” অর্থ এমন ব্যক্তি যিনি সন্তানের জনক;

(খ) “ভরণ-পোষণ” অর্থ খাওয়া-দাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বসবাসের সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদান;

(গ) “মাতা” অর্থ এমন ব্যক্তি যিনি সন্তানের গর্ভধারিণী;

(ঘ) “সন্তান” অর্থ পিতার ঔরসে এবং মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া সক্ষম ও সামর্থ্যবান পুত্র বা কন্যা;
  
  
 
পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ 
৩। (১) প্রত্যেক সন্তানকে তাহার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিতে হইবে।

(২) কোন পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকিলে সেইক্ষেত্রে সন্তানগণ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করিয়া তাহাদের পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিবে।

(৩) এই ধারার অধীন পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার একইসঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করিতে হইবে।

(৪) কোন সন্তান তাহার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাহার, বা ক্ষেত্রমত, তাহাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, কোন বৃদ্ধ নিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করিতে বাধ্য করিবে না।

(৫) প্রত্যেক সন্তান তাহার পিতা এবং মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখিবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করিবে।

(৬) পিতা বা মাতা কিংবা উভয়, সন্তান হইতে পৃথকভাবে বসবাস করিলে, সেইক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে নিয়মিতভাবে তাহার, বা ক্ষেত্রমত, তাহাদের সহিত সাক্ষাত করিতে হইবে।

(৭) কোন পিতা বা মাতা কিংবা উভয়ে, সন্তানদের সহিত বসবাস না করিয়া পৃথকভাবে বসবাস করিলে, সেইক্ষেত্রে উক্ত পিতা বা মাতার প্রত্যেক সন্তান তাহার দৈনন্দিন আয়-রোজগার, বা ক্ষেত্রমত, মাসিক আয় বা বাৎসরিক আয় হইতে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ পিতা বা মাতা, বা ক্ষেত্রমত, উভয়কে নিয়মিত প্রদান করিবে।
  
  
 
পিতা-মাতার অবর্তমানে দাদা-দাদী, নানা-নানীর ভরণ-পোষণ 
৪। প্রত্যেক সন্তান তাহার—

(ক) পিতার অবর্তমানে দাদা-দাদীকে; এবং

(খ) মাতার অবর্তমানে নানা-নানীকে—

ধারা ৩ এ বর্ণিত ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধ্য থাকিবে এবং এই ভরণ পোষণ পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ হিসাবে গণ্য হইবে।
  
  
 
পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ না করিবার দণ্ড 
৫। (১) কোন সন্তান কর্তৃক ধারা ৩ এর যে কোন উপ-ধারার বিধান কিংবা ধারা ৪ এর বিধান লংঘন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবে; বা উক্ত অর্থদণ্ড অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে।

(২) কোন সন্তানের স্ত্রী, বা ক্ষেত্রমত, স্বামী কিংবা পুত্র-কন্যা বা অন্য কোন নিকট আত্নীয় ব্যক্তি—

(ক) পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানীর ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধা প্রদান করিলে; বা

(খ) পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানীর ভরণ-পোষণ প্রদানে অসহযোগিতা করিলে—

তিনি উক্তরূপ অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করিয়াছে গণ্যে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
  
  
 
অপরাধের আমলযোগ্যতা, জামিনযোগ্যতা ও আপোষযোগ্যতা 
৬। এই আইনের অধীন অপরাধ আমলযোগ্য (cognizable), জামিনযোগ্য (bailable) ও আপোষযোগ্য (compoundable) হইবে।
  
  
 
অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ ও বিচার 
৭। (১) Code of Criminal Procedure, 1898 (Act V of 1898) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ ১ম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য হইবে।

(২) কোন আদালত এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট সন্তানের পিতা বা মাতার লিখিত অভিযোগ ব্যতীত আমলে গ্রহণ করিবে না।
  
  
 
আপোষ-নিষ্পত্তি 
৮। (১) আদালত এই আইনের অধীন প্রাপ্ত অভিযোগ আপোষ-নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বার, কিংবা ক্ষেত্রমত, সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার মেয়র বা কাউন্সিলর, কিংবা অন্য যে কোন উপযুক্ত ব্যক্তির নিকট প্রেরণ করিতে পারিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন কোন অভিযোগ আপোষ-নিষ্পত্তির জন্য প্রেরিত হইলে, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান, মেয়র, মেম্বার বা কাউন্সিলর উভয় পক্ষকে শুনানীর সুযোগ প্রদান করিয়া, উহা নিষ্পত্তি করিবে এবং এইরূপে নিষ্পত্তিকৃত অভিযোগ উপযুক্ত আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত বলিয়া গণ্য হইবে।
  
  
 
বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা 
৯। সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন